এক নজরে নায়েম
১. ভূমিকা
জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট কেন্দ্র এবং এটি শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে কাজ করে যাচ্ছে। নায়েমের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণকে জ্ঞান, পেশাগত দক্ষতা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নেতৃত্বের গুণাবলি দ্বারা সমৃদ্ধ করা। শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকল্পনা, প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা্ ও গবেষণার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নায়েম প্রধান ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে এডুকেশন এক্সটেনশন সেন্টার (EEC) প্রতিষ্ঠিত হয়। একটি বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে এটিকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)-এ রূপান্তর করা হয়। এর সংক্ষিপ্ত ধারাবাহিক বছরভিত্তিক পরিবর্তন নিম্নের ছকে দেখানো হলো;
২. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৯৫৯ |
১৯৭৫ |
১৯৮২ |
১৯৯২ |
এডুকেশন এক্সটেনশন সেণ্টার (EEC) নামে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের শিখন বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নায়েম তার যাত্রা শুরু করে। |
EEC এর কর্মকান্ডকে সম্প্রসারিত করে এটিকে বাংলাদেশ এডুকেশন এক্সটেনশন এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট (BEERI) নামে রূপান্তর করা হয় এবং কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক ও প্রশাসকসহ শিক্ষা ক্ষেত্রের সকল কর্মকর্তাদের গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়। |
অতিরিক্ত ব্যয় হ্রাস ও কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে NIEMR ও BEERI কে একীভূত করে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশনাল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এক্সটেনশন এন্ড রিসার্চ (NIEAER) নামে অভিহিত করা হয়। |
NIEAER-কে আবারও পরিবর্তন করে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) হিসাবে নামকরণ করা হয়। এ পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল শিক্ষাক্ষেত্রে পরিকল্পনা, প্রশাসন, ব্যবস্থাপনা ও গবেষণার উন্নয়নের ক্ষেত্রে এটিকে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেব প্রতিষ্ঠা করা। |
৩. স্বপ্ন ও লক্ষ্য
৩.১ স্বপ্ন
২০২১ সালের মধ্যে নায়েম-কে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা ।
৩.২ লক্ষ্য
গুণগত মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রাথমিক - পরবর্তী স্তরের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্ত্তত করা।
৪. নায়েমের উদ্দেশ্যসমূহ
৪.১ সাধারণ উদ্দেশ্য
নায়েমের সাধারণ উদ্দেশ্য হচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা স্তরের শিক্ষক উন্নয়ন ও মানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক - পরবর্তী স্তরে গুণগত মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা।
৪.২ বিশেষ উদ্দেশ্যসমূহ
৫. নায়েমের কার্যাবলি
সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ অর্জন করতে নায়েম নিম্নলিখিত কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে:
৬. সুযোগ-সুবিধা
শিক্ষা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নায়েমে রয়েছে প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা। মনোমুগ্ধকর সবুজ প্রকৃতি, সব ধরনের সুযোগসুবিধা সংবলিত শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ৮ একর জমির উপর নির্মিত নায়েম কমপ্লেক্স নিম্নলিখিত সুযোগ-সুবিধাদি প্রদান করে থাকে:
নায়েমে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সংবলিত ও সুসজ্জিত দুটি মিলনায়তন, অনেকগুলি শ্রেণিকক্ষ যা মাল্টিমিডিয়া ও স্মার্ট বোর্ড দ্বারা সংযুক্ত এবং দুটি সভাকক্ষ রুম রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে আধুনিক ও সুসজ্জিত দুটি ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব।
নায়েমে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার যেখনে পাওয়া যায় বই, ম্যাগাজিন, জার্নাল এবং দেশি-বিদেশি অন্যান্য প্রকাশনাসমূহ। এটি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের শিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে থাকে। এই গ্রন্থাগারের একটি অংশ তথ্যকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নায়েমের একটি সুসজ্জিত আইসিটি সেল রয়েছে । আজকের এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রতিদিনের দাপ্তরিক কাজে এবং চিঠিপত্রের আদান প্রদানের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয় । এই প্রতিষ্ঠানের আরো একটি লক্ষ্য হচ্ছে কম্পিউটার ব্যবহারের উপর টেকসই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীর পেশাগত উন্নয়ন সাধন করা । এই লক্ষ্যকে মাথায় রেখে নায়েমের আইসিটি সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । এই সেলের আওতায় ৩(তিন)টি কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । প্রতিটি ল্যাবে ২৫টি কম্পিউটার আছে । কম্পিউটার ল্যাবগুলিতে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাছাড়া অন্যান্য কোর্সেরও অধিবেশন পরিচালিত হয় । প্রশিক্ষণার্থীদের তথ্য ও সকল ডাটাবেজ সঠিকভাবে এই সেলে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে । নায়েমের রয়েছে একটি ওয়েবসাইট, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, ওয়াই-ফাই এবং ৩০ এমবিপিএস গতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ।
যেহেতু অধিকাংশ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিই আবাসিক, সেহেতু নায়েম নারী এবং পুরুষ উভয় প্রকার প্রশিক্ষণার্থীর জন্য হোস্টেল সুবিধা প্রদান করে থাকে। এখানে রয়েছে ৪১৫ সিট বিশিষ্ট ৫ (পাঁচ) টি হোস্টেল ভবন। এছাড়াও এখানে মহাপরিচালক মহোদয়ের বাসভবন, অনুষদবৃন্দের পরিবারসহ বসবাসের জন্য দুটি এবং কর্মচারিদের পরিবারসহ বসবাসের জন্য আরো দুটি মোট ৪ টি আবাসিক ভবন রয়েছে । এই কমপ্লেক্সের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।
নায়েমের দুটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। এর মধ্যে একটি বুনিয়াদি ও অন্যান্য কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য এবং অন্যটি নায়েমের কর্মকর্তা ও কর্মচারিবৃন্দের জন্য। এই ক্যাফেটেরিয়া দুটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য নিয়মিত নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে ।
নায়েমের একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। ডাক্তারের জন্য একটি চেম্বার ও একটি ডিসপেনসারি নিয়ে এই কেন্দ্র গঠিত। একজন মেডিকেল অফিসার এবং একজন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট দ্বারা এই কেন্দ্রটি পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণার্থী এবং নায়েমের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারি এই কেন্দ্রে স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীগণ এখান থেকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ পেয়ে থাকে।
নায়েমে একটি অত্যাধুনিক ব্যায়ামাগার রয়েছে । বুনিয়াদি কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়মিত শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যায়ামাগার ব্যবহার করে। অন্যান্য কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীদেরও ব্যায়ামাগার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
৭. বিভিন্ন বিভাগের কার্যাবলি
পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ নায়েমের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কার্যসমূহের সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পসমুহের নকশা (প্রণয়ন) করে। এ বিভাগ একটি নির্দিষ্ট বৎসরের জন্য পরিকল্পিত সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সংবলিত বার্ষিক প্রশিক্ষণ - পঞ্জিকা প্রণয়ন করে। একাডেমির আইসিটি সেল এ বিভাগে সংযুক্ত।
নায়েমের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসকগণকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন ও দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা । এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নায়েম বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ কোর্স কারিকুলাম এর নকশা প্রণয়ন ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করা প্রশিক্ষণ ও বাস্তবায়ন বিভাগের মূল দায়িত্ব। এ বিভাগের অধীন সদস্যগণ সেমিনার, ওয়ার্কশপ পরিচালনা, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল তৈরি, কোর্স রিপোর্ট তৈরি এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করতে প্রশিক্ষণার্থীদের সহায়তা করে থাকেন।
নায়েম এস.এস.সি.এম, এ.সি.ই.এম, শিক্ষা গবেষণা পদ্ধতি কোর্স, আইসিটি কোর্স, শিক্ষা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কোর্স, কমিউনিকেটিভ ইংলিশ কোর্স, গ্রন্থাগার পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা কোর্স ইত্যাদি কোর্সের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও এই বিভাগ বিভিন্ন কোর্সের বক্তা মূল্যায়নের কাজ করে থাকে।
নায়েম ২৩ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উল্লেখযোগ্য প্রশিক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে- SSCEM, ACEM, বুনিয়াদি কোর্স, শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা কোর্স, শিক্ষা গবেষণা পদ্ধতি কোর্স, শিক্ষা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, আইসিটি কোর্স, কমিউনিকেটিভ ইংলিশ কোর্স ইত্যাদি।
প্রশাসন ও অর্থ বিভাগ নায়েম এর সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গু্রুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন প্রশাসনিক কমিটিতে অন্তর্ভূক্তি ছাড়াও এ বিভাগ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স, কর্মশালা এবং সেমিনার আয়োজন, এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে সহায়তা প্রদান করে। হিসাব নিকাশ রাখা ও বাজেট তৈরি করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এ বিভাগ সম্পাদন করে থাকে। এই বিভাগ অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নিরীক্ষাসমূহ সম্পাদন করে থাকে। এ বিভাগ নায়েমের অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত কাজ এবং বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যাবলি তদারকি করে থাকে। প্রশিক্ষণ সামগ্রী, যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জামাদি ক্রয় করাও এ বিভাগের একটি নিয়মিত কাজ।
গবেষণা পরিচালনা, ফলো আপ এবং কেস স্টাডি করতে গবেষণা ও তথ্যায়ন বিভাগ নিবেদিত । প্রতি বছর এ বিভাগের নায়েম অনুষদবৃন্দ ও অন্যান্য সংস্থার গবেষকদের নিকট থেকে গবেষণা প্রস্তাব আহবান করে থাকে। নায়েম কর্তৃক পরিচালিত বার্ষিক বিভিন্ন কার্যাবলির সারসংক্ষেপসহ নায়েম নিউজ লেটার, ত্রৈমাসিক প্রকাশনা, নায়েম জার্নাল, নায়েমের অর্ধবার্ষিকী প্রকাশনা এবং বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশনার জন্য এই বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এ বিভাগ শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার উপর পুস্তক প্রকাশে সহায়তা প্রদান করে থাকে।